জাহাজ জব্দ, রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে চরম উত্তেজনা

ক্রিমিয়ার উপকূল থেকে ইউক্রেনের তিনটি জাহাজ রাশিয়া জব্দ করার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরম আকার ধারন করেছে।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভকারীরা সমবেত হয়ে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানায়। এই সময় একটি রুশ দূতাবাসের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ইউক্রেনের পার্লামেন্ট মার্শাল ল জারি করার করার কথা বিবেচনা করছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, জাহাজ জব্দ করার ঘটনায় বেশ কয়েকজন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।

দু’টি দেশই একে-অন্যকে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেদ্রো পোরোশেংকো বলেছেন, এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি পার্লামেন্টে সোমবার সামরিক আইন জারির ঘোষণার জন্য আহ্বান জানাবেন।

সংকটের শুরু হয় যখন রাশিয়া অভিযোগ তোলে যে, ইউক্রেনের জাহাজ রুশ সীমানায় ঢুকে পড়েছে।

রুশ-বাহিনী সাগরে যেখানে দু’দেশের অংশীদারিত্ব আছে সেখানে কের্চ স্ট্রেইট সেতুর নিচে ট্যাংকার স্থাপন করেছিল।

ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের মিটিংয়ের সময় প্রেসিডেন্ট পেদ্রো পোরেশেঙ্কো রাশিয়া ‘বিনা উসকানিতে উন্মত্ত  হয়ে’ এমন আচরণ করছে বলে মন্তব্য করেন।

কৃষ্ণ সাগরে এবং ক্রিমিয়ান উপকূলে আজোভ সাগরে উত্তেজনা সম্প্রতি বেড়েছে।

ভোরে ইউক্রেনের বারডিযানস্ক এবং নিকোপল যুদ্ধজাহাজ এবং দি ইয়ানা কাপা জাহাজ কৃষ্ণ সাগরের ওডিসি বন্দর থেকে রওনা হয় আযোভ সাগরের মারিউপোলের উদ্দেশ্যে।

ইউক্রেন বলছে, রাশিয়া জাহাজের পথ আটকাতে চেষ্টা করে, যদিও এরপর নৌযানগুলো কের্চ স্ট্রেইটের উদ্দেশ্যে চলছিল কিন্তু ট্যাংকার দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়।

রাশিয়া ওই এলাকাতে দুটো যুদ্ধবিমান এবং দুটো হেলিকপ্টার ডেকে আনে। তাদের অভিযোগ নৌযানগুলা অবৈধভাবে তাদের জলসীমায় প্রবেশ করেছিল এবং ওই পথে চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে নিরাপত্তার কারণে।

ইউক্রেনের নৌবাহিনীর সদস্যরা জানান, জাহাজ হামলার মুখে পড়লে তারা ওই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তাদের ছয়জন নাবিক আহত হয়ে বলেও জানানো হয়।

রাশিয়ার কর্মকর্তারা অবশ্য পরে নিশ্চিত করে যে তাদের একটি টহল জাহাজ তিনটি ইউক্রেনের জাহাজকে জোর করে জব্দ করে তবে তাদের দাবি কেবল তিনজন নাবিক আহত হয়েছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন কের্চ স্ট্রেইট-এ চলাচলের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করার জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এবং ‘চরম সংযমের সাথে যেকোনো কাজ করার জন্য সবাইকে’ তাগিদ দিয়েছে।

ন্যাটো বলেছে, তারা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করে এবং এর আঞ্চলিক অখণ্ডতা, আঞ্চলিক জলসীমায় তার ন্যাভিগেশন অধিকারকে সমর্থন দেয়।

ন্যাটো মনে করে, ইউক্রেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের অনুরোধ করেছে এবং মস্কোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের দাবি করেছে।

আজোভ সাগর ক্রিমিয়ার পূর্বে, ইউক্রেনের দক্ষিণে যে এলাকা রাশিয়ার-সমর্থক বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে। ইউক্রেনের দুটো বন্দর বার্দিআনস্ক এবং মারিউপোল শস্য রপ্তানি এবং স্টিল উৎপাদন এবং কয়লা আমদানির জন্য চাবিকাঠি। ২০০৩ সালের চুক্তিতে দু’দেশের নৌযানের অবাধ চলাচলের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।

রাশিয়া সম্প্রতি ইউক্রেনের বন্দর-মুখী কিংবা সেখান থেকে আসা জাহাজগুলো নজরদারি করছে। এ মাসের শুরুর দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্ক করে বলে, তারা এই ইস্যুটিতে উদ্দেশ্যমূলক ব্যবস্থা নেবে।

ইউক্রেন গত মার্চ মাসে ক্রিমিয়া থেকে আসা একটি মাছ ধরার নৌযান আটক করার পর থেকে এই তল্লাশি শুরু হয়। মস্কোর ভাষ্য, নিরাপত্তার কারণে এটি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ইউক্রেনের উগ্রপন্থীদের দিকেই সন্দেহপূর্ণ ইঙ্গিত করা হয়। ২০১৪ সাল থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই শুরুর পর থেকে পূর্ব দানেৎস্ক এবং লূহানস্ক অঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

রাশিয়া এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র দিয়ে এবং নিজেদের সৈন্য পাঠিয়ে সহায়তা করছে বলে ইউক্রেন এবং পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো অভিযোগ করে আসছে। মস্কো অবশ্য এমন অভিযোগ নাকচ করে আসছে, তবে রুশ স্বেচ্ছাসেবকরা বিদ্রোহীদের সহায়তা করছে বলে জানিয়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment